গুজরাটের শহরকে নিজেদের বলে দাবি পাকিস্তানের, ভারতে বিতর্কের ঝড়

1 min read

 দাবিটি অনেক পুরোনো হলেও আবারও সামনে এনেছে পাকিস্তান। ভারতের গুজরাটের জুনাগড় শহরকে নতুন করে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছে দেশটি। গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুমতাজ জাহরা বালোচ দাবি করেছেন, ১৯৪৮ সাল থেকেই জুনাগড় অঞ্চলকে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ভারত। তিনি এই দখলদারির নিন্দা জানান।


এ বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট বলেও দাবি করেছেন মুমতাজ জাহরা। তিনি বলেছেন, ‘দেশভাগের সময় জুনাগড় পাকিস্তানের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিল। পরে অবৈধভাবে তা দখল করে ভারত। গোটা বিষয়টিকে ঐতিহাসিক এবং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে পাকিস্তানের জনগণ। জুনাগড় পাকিস্তানের একটি অংশ এবং এই অংশ অবৈধভাবে দখল করে জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ভারত।’

বিষয়টি নিয়ে সোমবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, জুনাগড় নিয়ে পাকিস্তানের দাবি নতুন নয়। ২০২০ সালে নেপালের পর ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলকেও নিজেদের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের মন্ত্রিসভাও বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছিল।

সেই মানচিত্রে শুধু জুনাগড়ই নয়, ভারতের অন্তর্ভুক্ত লাদাখের কিছু অংশ, গুজরাটের মানবগড় শহর এবং স্যার ক্রিক অঞ্চলও পাকিস্তানের অংশ বলে দাবি করা হয়েছিল। সেই বছর জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার বর্ষপূর্তির ঠিক এক দিন আগে নতুন ওই মানচিত্র উন্মোচন করে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, ‘এই মানচিত্র প্রত্যেক পাক নাগরিক এবং কাশ্মীরের মানুষের আশার প্রতীক।’


প্রায় চার বছর আগে পাকিস্তানের ওই দাবিকে অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছিল ভারত। বিষয়টিকে পাকিস্তানের ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ বলে মত দিয়েছিল দিল্লি।

নিজেদের দাবির পক্ষে ইসলামাবাদ যুক্তি দিয়েছিল—জুনাগড়ের শেষ নবাব মহম্মদ জাহাঙ্গীর খান চাইতেন, জুনাগড় যেন পাকিস্তানেরই অংশ হয়। গত বছর করাচিতে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুর সময়ও জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘জুনাগড় পাকিস্তানের অংশ’। তবে মৃত্যুর আগে অনেক চেষ্টা করেও তিনি কখনো পূর্বপুরুষদের শাসন করা জমিতে ফিরে যেতে পারেননি। সেই দিনগুলোতে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘১৯৪৭ সালে আমার দাদা পাকিস্তানে যোগদানের জন্য স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে এর জন্য তাঁকে তাঁর রাজত্ব হারাতে হয়েছিল। আমরা এখনো আমাদের রাজ্যের (জুনাগড়) জন্য লড়াই করছি। বিষয়টি জাতিসংঘে বিচারাধীন।’

আনন্দবাজার জানিয়েছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময়ও জুনাগড় ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। জাহাঙ্গীরের দাদা নবাব মহম্মদ মহাবত খান পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চাইলেও তার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি প্রজারা। অশান্তি ঠেকাতেই শেষ পর্যন্ত ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু জুনাগড়ের কাছে সৈন্য পাঠান। ১৯৪৮ সালে একটি ভোটের মাধ্যমে জুনাগড়কে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করেন, জুনাগড় থেকে করাচি যাওয়ার পর মহাবত খান ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে জুনাগড়ে ফিরে আসার এবং তার রাজ্যকে ভারতের সঙ্গেই একত্রিত করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন। তবে কোনো কারণে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা জুনাগড়ে আর ফিরে যেতে পারেননি। পাকিস্তানের করাচিতে পরিবার নিয়ে যাওয়ার পর ফাতেমা জিন্না রোডে ‘জুনাগড় হাউস’ নামে একটি অট্টালিকাও তৈরি করেছিলেন মহাবত। সেই ভবনে তার মহাবতের বংশধরেরা এখনো বসবাস করছেন। মহাবতের পুত্র তথা জাহাঙ্গীরের বাবা নবাব মহম্মদ দিলওয়ার খানজি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের গভর্নরও হয়েছিলেন।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, ইমরান খানের সরকার জুনাগড়কে পাকিস্তানের অংশ দাবি করার চার বছর পর এখন দেশটিতে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তবে সরকার বদল হলেও সেই বিষয়টি নতুন করে আবারও চাঙা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Menu
Dark Theme
Share